Monday 13 June 2011

বাসনার সেরা বাসা রসনায়...

ঐতিহাসিক মেনু - সেকাল ও একাল 
(এগুলো মনে পড়ল কিন্তু আরো অনেক বাকি আছে, বই ধরে ধরে যোগ করব)

কর্চরিকা - কচুরি
শূল্য মাংস - শিক কাবাব (শিকে ঝলসানো মাংস)
উখ্য মাংস - শামি কাবাব (অর্থাৎ মাংসের বড়া)
ঘৃতলিপ্ত রোটিকা - ঘি মাখানো রুটি
পিষ্টক - পিঠে
পুরোডাশ - পায়েস
পর্পট - পাঁপড়
কপিত্থ তক্র - বেলের পানা
কাসমর্দ - কাসুন্দি
ভর্জিত মৎস্যাণ্ড - মাছের ডিম ভাজা
মধুপর্ক - মধু, দই, ঘি, চিনির মিশ্রণে তৈরি রহস্যময় খাবার
অবদংশ - রুচিকর খাদ্য (তেলেভাজা জাতীয় কিছু হবে )

চণক - চানা
চিপিটক - চিঁড়ে
গোধূমচূর্ণ - আটা/ময়দা
কোহল - মদ (জল না-মেশানো)

***

দুধির হালুয়া - লাউয়ের হালুয়া
শিং দেওয়া তুরের ডাল - সজনে ডাঁটা দেওয়া অড়হর ডাল
চিঞ্চের চাটনি - তেঁতুলের চাটনি

Monday 6 June 2011

হৈমশ্রী

হৈমশ্রী।

ইনি হৈমবতী নহেন, অতএব মানেক মেহতার হত্যারহস্যে লিপ্ত ছিলেন না, শীতঋতুর প্রাক্কালে সদ্যস্নাতা রূপে আবির্ভূত হইয়া অজিত বন্দ্যোকে মুগ্ধও করেন নাই।

ইনি মহাকবি কালিদাসের স্ত্রী। গৃহিণী সচিব সখী প্রিয়শিষ্যা।

এঁর আবির্ভাব "কুমারসম্ভবের কবি"তে। ইনিই সেই স্বর্গমর্ত্য-একাকার-করা উট্র-উষ্ট-আখ্যানগরীয়সী। ইনি কুন্তলাধিপতির দুহিতা,  অভূতপূর্ব স্বয়ংবরসভা আয়োজন করিয়া ইনি ভারতবর্ষে রীতিমত শোরগোল ফেলিয়া দিয়াছিলেন। দ্রৌপদীর ধারণা যিনি ঊর্ধ্বস্থিত ঘূর্ণায়মান মৎস্যচক্ষু বিদ্ধ করিতে পারিবেন, তিনিই বীরশ্রেষ্ঠ এবং তাঁহার স্বামী হইবার উপযুক্ত। হৈমশ্রীর মতিগতি দ্রৌপদী অপেক্ষাও বিচিত্র, তিনটি বিচিত্র উদ্দেশ্যবিহীন প্রশ্ন করিয়া তিনি আদর্শ স্বামী নির্বাচন করিবেন। অনেক শতক পরে জন্মাইলে তিনি হয়ত ও'ব্রায়েন পরিবারের বধূ হইয়া কলিকাতায় আসিতেন।

যাহা হউক, রাজদুহিতার ইচ্ছা, অতএব পালনার্হ। ঊনপঞ্চাশ পবনের ন্যায় ঊনপঞ্চাশ পাণিপ্রার্থী আবির্ভূত হন, এবং (সম্ভবতঃ সাজেশনের এবং উত্তরসমেত দশ বৎসরের প্রশ্নপত্রের অভাবেই) বিফলমনোরথ হইয়া স্ব স্ব গৃহে (অথবা অন্যত্র) প্রত্যাবর্তন করেন। অতঃপর সৌরাষ্ট্রকুমারের উপাধানপরিহিত কালিদাস অকুস্থলে আবির্ভূত হন, সম্পূর্ণ ভাগ্যবলে প্রশ্নত্রয়ীর সঠিক উত্তর দেন এবং হৈমশ্রীকে বিবাহ করেন।

সেই রাত্রে কালিদাসের প্রকৃত মেধা ও ধী সম্পর্কে মন্ত্রণাগৃহে ও বাসরকক্ষে পিতা ও পুত্রী প্রায় যুগপৎ অবগত হন। কালিদাস কুন্তল হইতে চিরতরে নির্বাসিত হন। এই তথ্য গোপন রাখা হয়, না হইলে ঊনপঞ্চাশ কণ্ঠের অট্টহাস্যে কুন্তলরাজের জীবন অতিষ্ঠ হইয়া উঠিত।

সমগ্র উত্তরভারত ঘুরিয়া কালিদাস উজ্জয়িনীতে স্থিত হন। তাঁহার খ্যাতি ক্রমশঃ সুদূরপ্রসারী হইয়া উঠে, এবং কুমারসম্ভবপাঠোৎসবে (যাহার শ্রোতৃবর্গের সংখ্যা একবিংশ শতকের প্রথিতযশা লেখকসমূহের পুস্তকমুক্তিউৎসবের সংখ্যা অপেক্ষা বহু অধিক) হৈমশ্রী অপরিসীম কৌতূহল লইয়া (তিনি ইতিমধ্যেই মেঘদূত পড়িয়া ফেলিয়াছিলেন) স্বয়ং আবির্ভূত হন। এবং বাণিজ্যিক ছায়াছবির অনুকরণে পুনরায় পিতৃগৃহে প্রত্যাবর্তন করেন নাই - শিপ্রাপার্শ্বস্থিত পর্ণকুটিরে অবশিষ্ট জীবন অতিবাহিত করিবার সিদ্ধান্ত নেন।

***

মহাকালের তৈলনিষিক্ত রথচক্র নিঃশব্দে অগ্রসর হইয়া চলে। বিক্রমাদিত্যের সুশাসনে উজ্জয়িনী হইয়া উঠে সমৃদ্ধতর; একইসঙ্গে বর্ধিত হয় মহাকবির লেখনীশৈলী ও জনপ্রিয়তা। রাজসভার নবরত্নের (শিরঃপীড়াকালীন মর্দনোপযোগী তৈলবিশেষ অথবা নিরামিষ কোর্মার নাম নহে - ধন্বন্তরি, ক্ষপণক, অমরসিংহ, শঙ্কু, বেতালভট্ট, বরাহমিহির, বররুচি ও কালিদাসের সমাবেশে সৃষ্ট বিক্রমাদিত্যের রাজসভার তারকাবৃন্দ) উজ্জ্বলতম রত্ন তিনি, সম্ভবতঃ নগরীর জনপ্রিয়তম পুরুষও।

অথচ কবি চিন্তিত। আর্যাবর্তের প্রত্যেক গৃহকোণে আজ কুমারসম্ভবের নামে জয়জয়কার - অথচ কবি অতৃপ্ত। তাঁর কুমারসম্ভবের সমাপ্তি হর-পার্বতীর মিলনে - বিবাহোত্তর জীবনের বর্ণনা কাব্যশাস্ত্রবহির্ভূত এবং সম্ভবতঃ রুচিবিরোধীও, কারণ দম্পতি এক্ষেত্রে সর্বপূজ্য দেবতা। কালিদাস এতে সন্তুষ্ট নন, তাঁহার ধারণা দাম্পত্যজীবনের সূচনায় কাব্যের পরিসমাপ্তি ঘটিতে পারে না, তাহার পূর্ণতাপ্রাপ্তি ঘটেনা।

সেযুগে হৈমশ্রীর তুল্য বিদুষী নারী সত্যই বিশেষ ছিল না। এমনকি তৎকালীন সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দু উজ্জয়িনীতেও। অথচ কালিদাস তাঁহার সহিত আলোচনায় প্রবৃত্ত হইলেন না (সম্ভবতঃ হস্তিকা-খৌন্তিক-সম্মার্জনীর ক্রমাগত ব্যবহারে কুন্তলকুমারীর কাব্যজ্ঞানে ঈষৎ মরিচা ধরিয়াছিল, হয়ত তিনি সহজে কুপিতও হইয়া উঠিতেন); আত্মগর্বে গর্বিত হইয়া অথবা অন্য অজ্ঞাত কারণে অন্য কবিদের সহিত পরামর্শেও যাইলেন না।

কালিদাস সমাপনকের উদ্দেশ্যে অগ্রসর হইলেন। নগরীর মুখ্য বারাঙ্গনা প্রিয়দর্শিকা এই সমাপনকের মধ্যমণি। প্রিয়দর্শিকা সামান্য বারবনিতা নহে - স্বয়ং বিক্রমাদিত্য তাহার গুণগ্রাহী, তাঁহার সভার অবশিষ্ট অষ্টরত্নের প্রায় প্রত্যেকে তাহার সমাপনকের নিয়মিত অতিথি। শুধু সামান্য রূপযৌবন নহে, শিক্ষা, বুদ্ধি, কাব্যরস, মননশীলতার  একত্র সমাবেশ এই নারী।

কালিদাসের সহিত প্রিয়দর্শিকার সম্পর্ক খানিকটা পৃথক স্বাদের ছিল। বর্তমান যুগের শিল্পমহলে এইরূপ একশ্রেণীর সম্পর্ক বিদ্যমান, যাহার সম্বন্ধে প্রশ্ন করিলে কৌতূহলী সাংবাদিক "we're just friends" অথবা অনুরূপ উত্তর পান। মননশীল পুরুষ ও নারীর সম্পর্ক সম্ভবতঃ যুগে যুগে এমনই হইয়া আসিতেছে - তাহাকে অবলম্বন করিয়া বিভিন্ন সংবাদপত্রের তৃতীয় পৃষ্ঠাকুল ক্রমে ফুলিয়া ফাঁপিয়া উঠিতেছে।

প্রিয়দর্শিকা হৈমশ্রীর কুশলপ্রশ্ন করিল। কালিদাস নীরস্পর্শ না করিয়া মৎস্যশিকারের ন্যায় প্রশ্নের জটিলতা এড়াইয়া গিয়া উত্তর দিলেন "তিনি গৃহেই আছেন"।

ইহাতে প্রিয়দর্শিকা অন্তরে সম্ভবতঃ তৃপ্ত হইল, কিন্তু তাহার সুললিত মুখমণ্ডলে তাহার মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটিল না। অভিনয়দক্ষতা সম্ভবতঃ তাহার পেশার অন্যতম পাথেয়।

সে কহিল "হায় কবি, এই সপ্তসাগরা পৃথিবী তোমার গুণে পাগল, কিন্তু তোমার গৃহিণী তোমাকে চিনিলেন না।" অতঃপর "আমি সব জানি কবি, আমার কাছে কোনও কথা গোপন করিবার চেষ্টা করিও না।"

রীতিমত লোমহর্ষক ব্যাপার! কুন্তুলকুমারী হৈমশ্রী, যাঁর পতিনির্বাচনের একমাত্র শর্ত ছিল বিদ্যা, যিনি মূর্খ হওয়ার অপরাধে স্বামীকে পরিত্যাগ করেছিলেন, এবং স্বামী অসামান্য কাব্যদক্ষতার পরিচয় পাইবার পূর্বাবধি প্রত্যাবর্তনের চিহ্নমাত্র প্রকাশ করেন নাই, যিনি গুপ্তযুগের নারীগণের মধ্যে বিদ্যায় জ্ঞানে সর্বপূজ্যা, তিনি কালিদাসকে, তাঁহার কাব্যপ্রতিভাকে চিনিবেন না? যে কাব্য শুনিয়া তিনি পিতৃগৃহের রাজসিক জীবনযাত্রা পরিত্যাগ করিয়া পর্ণকুটিরে অবশিষ্ট জীবন অতিবাহিত করিবার সিদ্ধান্ত লইয়াছিলেন, তিনি সেই কাব্যের অষ্টম সর্গের যৌক্তিকতা পরিমাপ করিতে পারিবেন না?

কিমাশ্চর্যম! কালিদাস এই ধৃষ্টতায় হতবাক বা রুষ্ট হইলেন না, বরং জিজ্ঞাসা করিলেন, হর-পার্বতীর দাম্পত্যজীবনে প্রারম্ভেই কুমারসম্ভবের সমাপ্তি হওয়া উচিত কিনা। সেই প্রাক্‌-চলচ্চিত্র যুগে আলিঙ্গনরত নায়ক-নায়িকার স্থিরচিত্রের উপর "THE END"-এর সহিত প্রিয়দর্শিকার পরিচয় ছিল না, থাকিলে হয়ত সে ইহার উত্তর সত্বর দিতে পারিত।

চলচ্চিত্রাদির বিষয়ে জ্ঞান না থাকিলেও প্রিয়দর্শিকার বুদ্ধি ছিল অপরিসীম। যখন সে দেখিল, কবি যৎপরোনাস্তি পীড়াপীড়ি করিতেছেন উত্তরের আশায়, সে কবিকে গৃহে প্রত্যাবর্তনের উপদেশ দিল। তখন গভীর রাত্রি - প্রিয়দর্শিকা কহিল যে প্রভাতের পূর্বেই কবি তাঁহার প্রশ্নের উত্তর পাইবেন।

সে বুঝিয়াছিল, কবি গৃহে প্রত্যাবর্তনমাত্র হৈমশ্রী নিজনামের যৌক্তিকতাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করিয়া জ্বলিয়া উঠিবেন, এবং তাহার নিজের উপর দুরূহ প্রশ্নের উত্তরদানের ভার ন্যস্ত হইবে না। জ্ঞানী ব্যক্তিবৃন্দ উক্ত পদ্ধতিকে একই লোষ্ট্রমাত্রের সাহায্যে পক্ষিযুগলের শিকার নিষ্পন্ন করা নামে অভিহিত করিয়া থাকেন।

তাহার কথামাত্রই হইল। রাত্রি তৃতীয় প্রহর অবধি জাগিয়া রাজদুহিতার উষ্ণ ক্ষাত্ররক্ত শিরায় ধমনীতে প্রবাহিত হইতেছিল - স্বামীর প্রবেশমাত্র দীর্ঘসুপ্ত আগ্নেয়গিরির মত তিনি ফাটিয়া পড়িলেন। এবং... সেই রাত্রেই কালিদাস অষ্টম সর্গের সূচনা করিলেন।

***

শরদিন্দু উপলব্ধি করিয়াছিলেন, হৈমশ্রীর চরিত্রে অসামঞ্জস্য রাখিয়াছেন তিনি, "কুমারসম্ভবের কবি" আর "অষ্টম সর্গ"য়। সাধারণ লেখক এই ত্রুটি করিলে ক্ষমাযোগ্য হইত, কিন্তু তিনি?

প্রকাশকের চাপে বা অন্য যেকোনো দুর্বোধ্য কারণে শরদিন্দু "প্রিয় চরিত্র" নামক একটি গল্প/প্রবন্ধ/গোত্রহীন রচনা সৃষ্টি করেন। লিখিতে গিয়া তিনি উপলব্ধি করেন, এই তাঁহার সুযোগ, হৈমশ্রীর চারিত্রিক অসামঞ্জস্য সংশোধনের।

তাঁহার ভাষাই উদ্ধৃত করি -
"তুমি এ কি কাণ্ড করেছ?"
"কি কাণ্ড করেছি?"
"আমাকে নিয়ে দুটো গল্প বানিয়েছ। একটাতে পরম-সুশীলা কুন্তল-রাজকুমারীর সঙ্গে আমার বিয়ে দিয়েছ। অন্যটিতে আমার স্ত্রীকে করেছ এক দজ্জাল খাণ্ডার মেয়েমানুষ। দুটোই কি করে সম্ভব হয়?"
"কেন সম্ভব হবে না? কুন্তলকুমারী কালক্রমে দজ্জাল খাণ্ডার হয়ে উঠতে পারেন। এমন তো কতই হয়।"
কবি মিটিমিটি হাসিয়া বলিলেন, "তোমার অভিসন্ধি বুঝেছি। অন্ধকারে দুটো ঢিল ছুঁড়েছ, যেটা লেগে যায়। কেমন?"
আমি উত্তেজিত হইয়া বলিলাম, "তাহলে একটা ঢিল লেগেছে?"
কালিদাস মাথা নাড়িয়া বলিলেন "উঁহু, এই ফাঁকে সত্য কথাটা জেনে নিতে চাও। সেটি হচ্ছে না।"

সাবলীল, সুন্দর, মসৃণ ম্যানেজ। সাময়িকভাবে সাধারণের স্তরে অবতরণ ঘটাইয়াছিলেন, পুনরায় দেবত্বে উন্নীত হইলেন।

Saturday 4 June 2011

তিনি

খ্রীষ্টীয় একবিংশ শতকের দ্বিতীয় দশকের প্রারম্ভ। বঙ্গভাষা এককালীন গৌরবমণ্ডিত স্বর্ণকিরীট অদ্য ভূলুণ্ঠিত। তাহার চলনে সে দীপ্তি নাই, তাহার বসন এক্ষণে মলিন, তাহার দৃষ্টি মূঢ়বৎ, অসহায়।

বিশ্বাস করিতে ক্লেশবোধ হয় যে এই ভাষা কতিপয় দশক পূর্বেও ছিল বিশ্বমধ্যে ভারতের অবিসংবাদী প্রতিভূ। এইকালে বঙ্গসাহিত্যের নানা্‌ন্‌ রথী-মহারথী একত্র হইয়াছিলেন, তাঁহাদের প্রতিভার আলোকচ্ছটায় বঙ্গের আকাশ বিকীর্ণ হইয়াছিল। অদ্য সেই অদ্রিকল্প সুউচ্চ দেদীপ্যমান্‌ প্রতিভাসমূহের অন্তর্ধানের ফলে সৃষ্ট অন্ধকার নিতান্তই অসহ্য ঠেকিতেছে - সদ্যপক্ব সুস্বাদু শূল্য মাংসের পরিবর্তে লবণের অনুপানের সহিত হিমবৎ চর্মতুল্য রোটিকার ন্যায়।

এই স্বর্ণযুগে তিনিও ছিলেন। তাঁর দীপ্তি রবীন্দ্রনাথের ন্যায় সর্বব্যাপী নহে। তাঁর উপস্থিতি বঙ্কিমচন্দ্রের ন্যায় ভাবগম্ভীর, শরৎচন্দ্রের ন্যায় অশ্রুসজল অথবা সুকুমারের ন্যায় সর্বজনগ্রাহ্য নহে। তিনি প্রকৃতপক্ষে কী, তাহা নির্ধারণ করিবার তুল্য ধী সাধারণ পাঠকের সাধ্যাতীত।

তিনি সকল প্রথাগত পরিমাপদণ্ডের ঊর্ধ্বে: বঙ্গসাহিত্যে তাঁর মূল্যয়ন হয় নাই। আর হইবেই বা কীরূপে? বঙ্গভাষার খ্যাতিমহলে পাদচারণারত রবীন্দ্রনাথকে তিনি অকস্মাৎ ভর্জিত মৎস্যাণ্ড কাশমর্দ-সহযোগে অফার করিতে পারেন, অথবা বঙ্কিমচন্দ্রের উষ্ণীষলাঞ্ছিত গাম্ভীর্যকে নস্যাৎ করিয়া তাঁহার পানে কাল্পনিক বন্দুক উঁচাইয়া বলিতে পারেন "গুড়ুম - ফিস্‌!" তিনি অরণ্যের সৌন্দর্যে বিহ্বল বিভূতিভূষণকে ন্যগ্রোধপরিমণ্ডলা তরুণীর লোভ দেখাইতেই পারেন, অথবা দাবি করিতেই পারেন যে জয় গোস্বামীর প্রকৃত নাম জয়কম্বু।

এহেন ব্যক্তির মূল্যয়ন অসম্ভব। তবে শ্রদ্ধানিবেদন অবশ্যই সম্ভব। আমার, আমাদিগের বঙ্গভাষার প্রতি প্রেমের জন্য তিনি অনেকাংশে দায়ী। এই শ্রদ্ধার্ঘ্য সেই অনুপাতে আনুবীক্ষণিক; তদাপি আমাদিগের পিপীলিকাবৎ নিরলস প্রচেষ্টার ফলে বঙ্গসাহিত্যের অধিষ্ঠাত্রী দেবী তুষ্ট হইয়া নব অবতারে, নবরূপে তাঁহাকে পিঁচুটিনয়না বঙ্গভাষার সেবায় পুনরায় ধরিত্রীবক্ষে প্রেরণ করিতেই পারেন।

হে-হে।

- অভিষেক